ইহুদিদের ঘৃণা করে মুসলমানরা কি পেল? [ পর্ব-২ ]

প্রাগৈতিহাসিক এ বিরোধীপূর্ণ ইতিহাসের কারণেই দুটো জাতি এখনো একে অপরের শত্রু হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে ও টিকে আছে নানাবিধ সংঘাত নিয়ে। কোরআনে হযরত ইয়াকুব (আ.) নামে যে প্রফেটর কথা বলা হয়েছে, তাকেই ইহুদিরা বলে জ্যাকব তথা ‘ইজরায়েল’। বিশ্বে একটি মাত্র রাষ্ট্র কোন প্রফেটর নামে নামকরণকৃত, যেটি হচ্ছে ‘ইজরায়েল’। কিন্তু মুসলমানগণ বিশ্বে এতো অধিক এবং তাদের রাষ্ট্রের সংখ্যাও কমপক্ষে ৫৭-টি হওয়ার পরও, বিশ্বের কোন রাষ্ট্রের নামই মুসলমানদের প্রফেট মহম্মদ (স.) এর নামে নামকরণ করা হয়নি, যদিও বহু মুসলমান রাজা-বাদশার নামে মুসলমান দেশের নামকরণ করা হয়েছে, যেমন সৌদি আরব (কিং সৌদের নামে নামকরণকৃত)। অথচ ধর্মের জন্যে মুসলমানগণ প্রায়ই জান দিতে ‘সদা প্রস্তুত’। বিশ্বে বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১৫০-কোটির মত, যেখানে ইহুদিদের সংখ্যা মাত্র ১ কোটি ৪ লাখ। বিশ্বের জনসংখ্যা হিসেবে মুসলমান ইহুদির অনুপাত হচ্ছে ৫:১। এ ছাড়াও প্রতি ২-জন মুসলমানের বিপরীতে ১-জন হিন্দু, প্রতি ২-জন মুসলমানের বিপরীতে ১-জন বৌদ্ধ এবং প্রতি ১০৭-জন মুসলমানের বিপরীতে ১-জন ইহুদির বাস আজকের বিশ্বে। সে হিসেবে বিশ্বে মুসলমানগণ বেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ বটে।

:

মুসলমানরা যদিও ইহুদিদের ঘৃণা করে এবং ইহুদিরাও করে মুসলমানদের। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের অবস্থানগত দিক দিয়ে ইহুদি তথা ইহুদিরা আছে ভাল অবস্থানে, অন্তত মুসলমানদের থেকে। প্রত্যেকটি ইহুদির মধ্যে আছে জাতিগত ঐক্য। প্রত্যেকটি ইহুদি জানে অপর ইহুদির খোঁজখবর তথা অবস্থান, সে যে দেশেই বসবাস করুক না কেন। যেখানে মুসলমানগণ নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ করে সময় কাটাচ্ছে অহরহ। এক মুসলমান রাষ্ট চাইছে অন্য মুসলমান রাষ্ট্রের ধ্বংস কিংবা নানাভাবে আক্রমণ করতে (সর্বশেষ উদাহরণ সিরিয়া, মিসর)। উইক্লিক্সের ভাষ্যমতে, সৌদি আরব আমেরিকাকে অনুরোধ জানাচ্ছে ইরান আক্রমনের জন্যে। মধ্যযুগকে যদিও মুসলমানদের স্বর্ণযুগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে নানা কারণে কিন্তু একুশ শতকের মুসলমানদের অবস্থানের দিকে আমরা তাকাবো কি? অবশ্যই আমাদের তাকানো উচিত নিজেদের অস্তিত্বের কারণে। দেখা যাক, একনজরে বিশ্বের আজকের মুসলমান ও ইহুদিদের সপ্তপদী অবস্থানগত দিক ও এর পরিমাপ।

:

আজকের আধুনিক বিশ্বের রাজনীতি, আবিস্কার, উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রায় সর্বত্র ইহুদিরা রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আলবার্ট আইনেস্টাইন, সিগমন্ড ফ্রোয়েড, কালমার্কস, পল শ্যামুয়েল সান এরা সবাই জাতিতে ইহুদি ছিলেন। যেখানে মুসলমানের ভূমিকা নিতান্তই নগণ্য। বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ ব্যক্তিত্বের নামের তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হচ্ছে ইহুদি ধর্ম অনুসারীগণ। আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ‘বেন বারনানকি’ একজন ইহুদি। হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ ‘রাহম ইমানুয়েল’ ধর্মীয়ভাবে ইহুদি। গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ‘সার্জে ব্রিন’ও হচ্ছেন ইহুদি। এ ছাড়া বিশ্বের প্রধান ইহুদি ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন- আন্তর্জাতিক মানিটরী এজেন্সীর প্রধান ‘ডোমিনিক স্টারুজ কাহন’, নিউইয়র্কের মেয়র মাইকেল বস্নুমবার্গ, ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বার্নাড কুচনার, ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক যুকারবার্গ, ওরাকল প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারী ইলিশান, বেঞ্জামিন রুবেনঃ রোগ প্রতিরোধের ভ্যাকসিন আবিস্কারক, জনাস সলকঃ পলিও ভ্যাকসিন আবিস্কারক, গেটার্ড এলিওনঃ লিউকোমিয়ার ঔষধ আবিস্কারক, বারুচ বস্নুমবার্গঃ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আবিস্কারক, পাউল এরলিশঃ সিফিলিস রোগের আবিস্কারক, এলি মেটচেনিকফঃ নিউরো মাসকুলার এর আবিস্কারক, আন্দ্রে সেলিঃ এন্ডেক্রিনোলজির আবিস্কারক, এ্যারক ব্যাকঃ কগনেটিভ থেরাপীর আবিস্কারক, গ্রেগরী পিনকাসঃ জন্মনিয়ন্ত্রক পিল আবিস্কারক, জর্জ ওয়ালদঃ চক্ষু চিকিৎসার জিনিসপত্র আবিস্কারক, স্টেনলি কোহেনঃ এমব্রিওলজির আবিস্কারক, উইলিয়াম ক্লফকামঃ কিডনী রোগের ডায়ালাইসিস এর আবিস্কারক, স্টেনী মেজরঃ মাইক্রো প্রসেসর উদ্ভাবক, লিও সিল্যান্টঃ নিউক্লিয়ার চেইন রিএ্যাকটর উদ্ভাবক, পিটার সুটসঃ অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল উদ্ভাবক, চার্লস এডলারঃ ট্রাফিক লাইট উদ্ভাবক, বেনো স্ট্রাউজঃ স্টেললেস স্টিল উদ্ভাবক, ইসাডর কিসিঃ সবাক চলচ্চিত্র উদ্ভাবক, এমিল বার্লিনারঃ টেলিফোন মাইক্রোফোন উদ্ভাবক, চার্লস গিনসবার্গঃ ভিডিও টেপ রেকর্ডার উদ্ভাবক। এ ছাড়াও বিশ্বের বড় বড় কোম্পানীর মালিক ও পরিচালক হচ্ছেন নিম্নবর্ণিত ইহুদিগণ। যেমন পলো (বস্ত্র) : রাফ লরেন, কোকাকোলা, লেভিজ জিন্স (নীল সুতার প্যান্ট), স্টারবাক্স (কফি ও পানীয়), ডেল কম্পিউটার (মাইকেল ডেল), ডিকেএনওয়াই (ইলেকট্রনিক্স ও পারফিউম), ডনা কারান, বাসকিন এন্ড রবিন্স ডেয়ারী / ইরভ রবিন্স, ডানকিন্স ডনাটস্ (কফি ও পেস্ট্রি) বিল রজেনবার্গ। বিশ্বের রাজনীতি-অর্থনীতি নিয়ন্ত্রক নামকরা অন্য ইহুদিগণ হচ্ছেন হেনরী কিসিঞ্জার, সিএনএন, এবিসি নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট, টাইম ম্যাগাজিন, নিউইয়র্ক টাইমস। এ ছাড়া মানবসেবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় দানকারী (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মিউজিয়াম ইত্যাদি খাতে) ইহুদি হচ্ছেন ‘জর্জ সরোজ’ ও ‘ওয়ালটার আনেনবার্গ’।

 

You may also like...