বিবর্তনের ধারায় মানব সমাজ – মহামন্দা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

দশম অধ্যায়

মহামন্দা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

 

অর্থনৈতিক সংকট যেমন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করছিল তেমনি বিভিন্ন দেশের মধ্যেও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছিল। প্রত্যেক দেশই তার নিজস্ব অর্থনীতিকে অন্য দেশের শিল্পের প্রতিযােগিতা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিল। নিজস্ব মুদ্রার মূল্য কমিয়ে এবং অন্য দেশের পণ্যের শুল্ক বাড়িয়ে দেশের বাজারে দেশে উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি বাড়ানাের চেষ্টা প্রত্যেকটা দেশই করছিল। প্রত্যেক দেশেই রাষ্ট্র অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা পালন করছিল। যেসব শিল্প প্রতিযােগিতায় পিছিয়ে পড়ছিল সেগুলাে বন্ধ করে দিতে বাধ্য করছিল। কোন কোন শিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করা হচ্ছিল। সবই করা হচ্ছিল অনান্য শিল্পকে প্রতিযােগিতামূলক রাখার জন্য। এমনকি বৃটেনের রক্ষণশীল সরকারও বিদ্যুৎ সরবরাহ, কয়লা খনির স্বত্ব, জাতীয় বিমান পরিবহন রাষ্ট্রায়ত্ত করেছিল।

দেশের অভ্যন্তরে দেশীয় পুঁজিকে একচেটিয়া বাজারের সুবিধা করে দেওয়া আর দেশের বাইরে প্রয়ােজনীয় সম্পদ আরােহন করা-এ দুটো সমন্বয় করার পথ ছিল রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের সীমানা বাড়ান। প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রনে থাকা সাম্রাজ্য ও পরােক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্র এগুলাে তখন আরাে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলাে তাদের মুদ্রাভিত্তিক প্রভাব-বলয় সৃষ্টি করেছিলঃ ষ্টার্লিং এলাকা (বৃটেনের), ডলার এলাকা (আমেরিকার), স্বর্ণ এলাকা (ফ্রান্সের), মার্ক এলাকা (জার্মানীর) এবং সােভিয়েত ইউনিয়নের এলাকা। প্রভাব-বলয় গুলাে সমান ছিল না। বৃটেন, ফ্রান্স, আমেরিকা ও সােভিয়েত বলয় ছিল বৃহৎ। তুলনায় ইউরােপের সবচাইতে শিল্প সমৃদ্ধ দেশ জার্মানীর কোন সাম্রাজ্য ছিল না। বরং প্রথম মহাযুদ্ধের পর তার উপর যে সব শর্ত আরােপ করা হয়েছিল, তাতে সে নিজস্ব ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। অর্থনৈতিক মন্দার ফলে জার্মানীর শিল্পপতিরা ভার্সাই চুক্তির আরােপ করা অর্থনৈতিক শিকল ভেঙ্গে ফেলতে সচেষ্ট হল। তারা চাইছিল জার্মানী যুদ্ধের পর পােল্যান্ডের কাছে যে এলাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তা আবার ফিরিয়ে নিতে। তারা আরও চাইছিল অষ্ট্ৰীয়া ও চেক রাষ্ট্রের জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চল জার্মানীর অন্তর্ভুক্ত করতে। হিটলারের বিজয় যে শুধু শ্রমিকদের উপর পুঁজিপতিদের বিজয় তাই নয়, এ বিজয় ছিল জার্মান পুঁজিপতি ও ক্ষমতাসীনদের সেই অংশের যারা শক্তি প্রয়ােগ করে অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছ থেকে সাম্রাজ্যের অংশ নেওয়ার পক্ষে ছিল। এই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের পরিচালনায় পুঁজিবিনিয়ােগ, রাষ্ট্র কর্তৃক কাঁচামাল বন্টন এবং বহির্বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ-এ ব্যাপারে পুঁজিপতিরা একমত হল। একজন পুঁজিপতি থাইসেন আপত্তি জানাল। তার সমস্ত স্থাপনা নাৎসী দল দখল করল এবং সে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হল। অন্যান্য পুঁজিপতিরা রাষ্ট্রের পরিচালনায় লাভজনক ব্যবসা করতে থাকল একদম ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত-অর্থাৎ যুদ্ধ শেষে জার্মানীর পতন না হওয়া পর্যন্ত।

সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন বাড়ানর জন্য শ্রমিকদের কাজের সময় বাড়ান হল। কিন্তু নাৎসীরা শ্রমিকদের উপর বেশী চাপ দিতে সাহস পাচ্ছিল না। দমন করা হলেও ১৯১৮-২০ সালের বিপ্লবী আন্দোলন তাদের মনে ছিল। অন্যান্য রাজ্য দখল করার চাপ ছিল এই কারণে যে সে সমস্ত রাজ্যের কাঁচামাল ও খনিজ পদার্থ পাওয়া যাবে এবং দখলকৃত এলাকার মানুষদের আরও কম পারিশ্রমিকে জোর করে কাজ করান যাবে। বিশেষ করে অষ্টয়ার কৃষিজাত পণ্য, চেক রাষ্ট্রের অস্ত্র কারখানা, পােল্যান্ডের কয়লা ও রােমানিয়ার জ্বালানী তেল-এগুলাে জার্মানীর সমরশক্তি বাড়ানর জন্য খুবই দরকার বলে জার্মান পুঁজিপতিরা মনে করল। নাৎসী নেতৃত্বও এ ব্যাপারে একমত হল।

জাপান এশিয়াতে জার্মানীর মত একই ধরনের নীতি বাস্তবায়ন করা শুরু করেছিল। ইতিমধ্যেই জাপান তাইওয়ান ও কোরিয়া দখল ও নিয়ন্ত্রণ করছিল এবং উত্তর চীনের একটা বিরাট অঞ্চলে বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করেছিল। ১৯৩১ সালে জাপান উত্তর চীনের মাঞ্চুরিয়া নামক অঞ্চল দখল করে নিল। জাপান ১৯৪০ সালে ফ্রান্স ও বৃটেনের ব্রিতকর অবস্থার সুযােগ নিয়ে ইন্দোচীন দখল করে বার্মা পর্যন্ত এগিয়ে গেল।

জার্মান নাৎসী সরকার সরকারের অর্থায়নে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, যা তারা সরকারে আসার আগেই শুরু করা হয়েছিল, তা বাড়িয়ে দিল। ফলে বেকারত্ব শতকরা ৪০ ভাগ এক বৎসরের মধ্যেই কমে গেল। কিন্তু সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনে বর্ধিত সম্পদ নিয়ােগ করায় শ্রমিকদের প্রকৃত আয় বাড়েনি। ১৯৩৩ সালের পাওয়া জরুরী আইনের বলে হিটলার শাসন চালিয়ে যেতে লাগল। উগ্র বক্তব্য দিয়ে জার্মানদের মধ্যে জাতীয়তাবােধ বাড়িয়ে তােলা হল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর যে

সমস্ত ক্ষতিকর ও অবমাননাকর শর্ত জার্মানী মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল, এই মনোভাব তৈরীর জন্য সহায়ক হয়েছিল। এছাড়া নাৎসীরা সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি করল। প্রথমে এটা জার্মান ইহুদীদের লক্ষ্য করে করা হল। জার্মান ইহুদীরা তুলনামূলক ভাবে অধিক বিত্তশালী ও ব্যবসা বাণিজ্যের অধিকারী হওয়ায় এই মনোভাব তৈরী করা সহজ হল। ১৯৩৫ সালের পর থেকে আইন করে তাদের শাসনতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার খর্ব করা হল। তাদের ভূ-সম্পত্তি, ব্যবসা দখল করে নেওয়া হল। তাদের বাড়িঘর ও উপাসনালয় আক্রমণ করা শুরু হল। ১৯৩৯ সাল নাগাদ জার্মানীতে কথা বলার অধিকার, সংবাদপত্র গুলোর স্বাধীনতা, এমনকি সংসদেরও কোন স্বাধীনতা থাকল না।

হিটলার পূর্ব দিকে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চাইলেন। এই অঞ্চলের রাষ্ট্র গুলো ছিল স্লাভ জাতি গোষ্ঠীর। যাদেরকে হিটলার জার্মানদের চাইতে নিকৃষ্ট বলে মনে করতেন। পরিবেশ তখন তার জন্য অনুকূল ছিল। মিত্রশক্তির সৈন্যরা ১৯৩০ সালে জার্মানী ছেড়ে চলে গিয়েছিল। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে জার্মানী ক্ষতিপূরণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। অন্যান্য দেশ অনেক কাল পর্যন্ত জার্মানীর কর্মকান্ডের বিরোধিতা করতে অনিচ্ছুক ছিল। খোদ বৃটেনেই অনেকে মনে করত প্রথম মহাযুদ্ধের পর জার্মানীর উপর আরোপ করা শর্তগুলো বেশী কঠিন হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির স্মৃতি ছিল অনেকেরই, আবার একটা যুদ্ধের দিকে যেতে তাই ছিল অনীহা। বৃটেন ও ফ্রান্স উভয় দেশেই শক্তিশালী গোষ্ঠী ছিল যারা শ্রমিক শ্রেণীকে দমিয়ে রাখার জন্য জার্মানীকে তাদের মিত্র মনে করত। তারা বরং প্রগতিশীলদের সঙ্গে লড়াইয়ে জার্মানীর চাইতে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বড় শত্রু মনে করল। অনেকেই মনে করেছিল জার্মানী সোভিয়েত কমিউনিষ্টদের শক্তি দমন করার জন্য একটা ভাল উপায়। আমেরিকানরা অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত হয়ে ইউরোপের ঘটনাবলীতে আগ্রহী ছিল না। মুসোলিনী প্রথম দিকে হিটলারের সম্পর্কে দ্বিধান্বিত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জার্মানীর সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিল ।

জার্মানী এই পরিস্থিতির সুযোগ নিল। জাপানও পূর্ব এশিয়ায় এই সুযোগ নিচ্ছিল। হিটলার তার পূর্বসূরীদের দাবী আবার ব্যক্ত করল। অন্যান্য দেশের মত জার্মানীকেও সৈন্য বাহিনী রাখার অধিকার দিতে হবে। ১৯৩৫ সালে হিটলার সৈন্যবাহিনীতে কাজ করা জার্মানদের জন্য বাধ্যতামূলক করল। এরপর যুদ্ধে যে সমস্ত এলাকা জার্মানী হারিয়েছিল তা আবার দখলে নেওয়া শুরু হল । ১৯৩৬ সালের মার্চ মাসে জার্মান সৈন্যবাহিনী রাইনল্যান্ডে প্রবেশ করল । এখানে জার্মানীর সৈন্য বা সামরিক স্থাপনা চুক্তি অনুযায়ী নিষিদ্ধ ছিল। বৃটেন ও ফ্রান্স কোন আপত্তি জানাল না বা পদক্ষেপ নিল না। হিটলার এরপর ঘোষণা করল জার্মানী পশ্চিম দিকের নির্ধারিত সীমানা মানবে না। বৃটেন ও ফ্রান্স সমরসজ্জা শুরু করল ।

১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে অষ্ট্ৰীয়ায় গণভোট অনুষ্ঠান করে অস্ট্রীয়াকে জার্মানীর সঙ্গে একত্রীকরণ করল । এটাও ভার্সাই চুক্তির বরখেলাপ ছিল । এবার হিটলার দাবী করল চেকোশ্লাভাকিয়ার জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চলকে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার দিতে হবে। যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক ফ্রান্স ও জার্মানী আলাপ আলোচনার পর মিউনিখে চুক্তি করে চেকোশ্লাভাকিয়ার একটি বড় অংশ জার্মানীকে ছেড়ে দিল। এ ব্যাপারে রাশিয়ানদের মতামত না নেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হল। জার্মানীর মানুষের ধারণা হতে থাকল হিটলার সবই পারে, আর হিটলারের ধারণা হল বৃটেন ও ফ্রান্সকে চাপ দিয়ে সবই আদায় করা যাবে। এই পর্যন্ত বৃটেন ও ফ্রান্স আপোষমুখী ছিল। এরপর জার্মানী চেকোশ্লাভাকিয়ার বাকী অংশ দখল করে নিল। এতে বৃটেনে জনমত জার্মানীর বিপক্ষে গেল। বৃটিশ সরকারও সামরিক বাহিনীতে কাজ করা বাধ্যতামূলক করল। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো জার্মানীর আক্রমণাত্নক আচরণে ভীত হয়ে পড়ল। বৃটেন কয়েকটা সরকারের সঙ্গে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হল, আক্রান্ত হলে বৃটেন তাদের প্রতিরক্ষা দেবে, এর মধ্যে ছিল পোল্যান্ড ।

পোল্যান্ড আক্রমণের জন্য জার্মানী সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করল। ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মান সৈন্যবাহিনী পোল্যান্ডের ভিতর ঢুকে পড়ল। হিটলারের ধারণা ছিল পোল্যান্ডের জন্য বৃটেন ও ফ্রান্স যুদ্ধে নামবে না। তবে বৃটেনে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী তৈরী হয়েছিল দুইজন সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিকের নেতৃত্বে, তারা হলেন উইনষ্টন চার্চিল ও এন্থনী ইডেন। তাঁরা মনে করেছিলেন ইউরোপে জার্মান আধিপত্য বৃটিশ সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। এই গোষ্ঠীর চাপের ফলে বৃটেন এবং ফ্রান্স অনেকটা কম উৎসাহ নিয়ে জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল ৩রা সেপ্টেম্বর । পোল্যান্ডকে সাহায্য করার জন্য তারা কিছুই করেনি। শুধু পোল্যান্ডের সৈন্যবাহিনীর একটা অংশকে কাজে লাগানোর জন্য তারা সরে আসতে সাহায্য করল। ১৯৩৯-৪০ সালের শীতকাল ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় ফিনল্যান্ড

সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল । ফিনল্যান্ডকে জার্মানী সমর্থন করছিল, বৃটেন ও ফ্রান্সও সমর্থন করছিল । জার্মানী এই সময় কাজে লাগিয়েছিল ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ঝটিকা আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিতে। এপ্রিল ১৯৪০ এ জার্মানী তার খনিজদ্রব্যের সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখার জন্য নরওয়ে ও ডেনমার্ক দখল করল। প্রায় একই সময়ে বেলজিয়াম ও হল্যান্ডের ভিতর দিয়ে জার্মান বাহিনী ফ্রান্সে দ্রুত অগ্রসর হল। ১৯৪০ সালের মে মাসে দুই সপ্তাহের মধ্যে জার্মান বাহিনী সম্মিলিত বৃটেন ও ফ্রান্স বাহিনীর মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছিল। জার্মান বাহিনী ১৪ই জুন প্যারিস দখল করল। বৃটিশ বাহিনী ডানকার্ক থেকে সমুদ্রপথে অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালিয়ে বাঁচল । এই বিজয় মুসোলিনীকে প্রণোদিত করল জার্মানীর পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিতে । হিটলার মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেলেন ।

বৃটেনে এই সময় উইনষ্টন চার্চিলের নেতৃত্বে একটি কোয়ালিশন সরকার ছিল। বৃটেন এই সময় জার্মানীর বিরুদ্ধে অনেকটা একা হলেও সুবিধা ছিল বৃটেন ছিল সমুদ্রবেষ্টিত। বৃটেন আক্রমণের আগে বৃটিশ আকাশে বিমান আধিপত্য স্থাপনের জন্য ১৯৪০ সালের আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বৃটেনের আকাশে জার্মান ও বৃটিশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধে (Battle of Britain নামে খ্যাত) বৃটিশ বিমান বাহিনীকে পরাস্ত করা যায়নি। এরপর জার্মানীর বৃটেন দখল করার আর কোন আশা থাকল না । ১৯৪১ সালে জার্মানী যুগোশ্লাভিয়া ও গ্রীস দখল করল । সাবমেরিন দ্বারা আক্রমণ করে এই সময় বৃটিশ নৌ বাণিজ্য জার্মানী পর্যুদস্ত করে তুলেছিল । ফ্রান্স জয় করার ১ বৎসর পর জার্মানী ভিন্ন দিকে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিল। এবার পূর্ব দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঝটিকা আক্রমণ করে শীত শুরু হওয়ার আগেই তাকে পরাস্ত করতে চাইল ।

১৯৪১ সালের ২২শে জুন হিটলারের ঝটিকা আক্রমণ শুরু হল সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর। হিটলারের লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বাল্টিক (Baltic) এলাকা ইউক্রেন ও মস্কো দখল করা, সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক ক্ষমতা শেষ করা, কমিউনিজম উৎখাত করা, দখলকৃত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে সেখানে জার্মানদের জন্য স্থান করে দেওয়া (Lebensraum) ও সেই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ জার্মানীর অন্যান্য শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা । জার্মানী তার সৈন্যবাহিনীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এবং বিমান বাহিনীর বড় অংশটাই ফ্রান্স থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে সোভিয়েত ইউনিয়ন অভিযানে লাগিয়েছিল। সোভিয়েত সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করে দ্রুত এগিয়ে গেল জার্মান বাহিনী এবং মস্কোর কাছাকাছি চলে আসল। কিন্তু শীত আসার আগে সোভিয়েত প্রতিরোধ সম্পূর্ণ শেষ করতে পারল না জার্মানরা। শীতের জন্য জার্মানরা প্রস্তুত ছিল না। আকারে অনেক বড় একটা দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জার্মানরা আটকে পড়ল। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা ছিল সবচাইতে বড় স্থলযুদ্ধ ।

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরাট অঞ্চল দখল করা সত্ত্বেও জার্মানী তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন তার যুদ্ধ করার ক্ষমতা রক্ষা করেছিল। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত সৈন্যবাহিনী শক্তি সঞ্চয় করে একটি বিরাট প্রতিআক্রমণ শুরু করল প্রায় ১০০০ কিলোমিটার সম্মুখভাগ জুড়ে। জার্মান বাহিনী ১০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পিছিয়ে যেতে বাধ্য হল। সোভিয়েত নেতা ষ্ট্যালিন বার বার চার্চিল এবং তারপর রুজভেল্টকে অনুরোধ করল ইউরোপের পশ্চিম দিকে প্রতিআক্রমণ করার জন্য। চার্চিল ও রুজভেল্ট প্রস্তুতি নিতে সময় লাগবে বলে দেরী করতে থাকল । অনেকেই মনে করেন তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘাড়ে ইউরোপের যুদ্ধের প্রধান বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন পরিকল্পিত ভাবে। ইউরোপে পূর্ব দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বিশ্বযুদ্ধের প্রধান ক্ষেত্র। যুদ্ধে পশ্চিমা মিত্রদের জীবনহানির চাইতে অনেক গুণ বেশী ছিল যুদ্ধে সোভিয়েতের লোকক্ষয় (১ কোটি ৩০ লক্ষ সৈন্য)।

১৯৪২ সালের গ্রীষ্মে জার্মানরা সোভিয়েতের দক্ষিণাঞ্চলে ককেশাসের তেল খনি অঞ্চল দখল করল। উত্তরে তাদের অবস্থানও ধরে রাখল। শীতকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আবার প্রতিআক্রমণ শুরু করল। ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে অনেক ক্ষয়ক্ষতির পর ষ্ট্যালিনগ্রাডে প্রায় আড়াই লক্ষ জার্মান সৈন্য আত্নসমর্পণ করল। পরবর্তী গ্রীস্মে জার্মানরা খারকিভ অঞ্চলে আবার আক্রমণ করল। কিন্তু এখানে জার্মানরা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ১২ জুলাই ১৯৪৩ সোভিয়েত ইউনিয়ন আবার প্রতি আক্রমণ করল। কুরস্ক (Kursk) এ সোভিয়েত বিজয় জার্মান বাহিনীর পতনের সূচনা করল। জার্মানরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও সোভিয়েত বাহিনী তা ভেঙ্গে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে লাগল । ১৯৪৪ সালের মে মাস নাগাদ সোভিয়েতরা ক্রিমিয়া মুক্ত করল, ইউক্রেন থেকে জার্মান বাহিনী হঠিয়ে দিল ও রোমানিয়ায় প্রবেশ করল।

বৃটেন ও ফ্রান্সের দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে ১৯৪০ সালে জাপান ইন্দোচীন দখল করে বার্মা পর্যন্ত এগিয়ে গেল। আমেরিকায় জনমত জাপানের বিরুদ্ধে যেতে লাগল। মার্কিন সরকার নাগরিকদের জাপানের সঙ্গে ব্যবসা করা নিষিদ্ধ করল, বিশেষ করে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ করল। আমেরিকা তার প্রশান্ত মহাসাগর নৌবাহিনী ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সরিয়ে হাওয়াই দ্বীপের পার্ল হারবারে এগিয়ে নিল। জাপানে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে আমেরিকার বিরুদ্ধে যাওয়া নিয়ে দ্বিমত ছিল। শেষে ১৯৪১ সালের শেষ দিকে তারা আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিল । ৭ই ডিসেম্বর জাপানের বিমান বহর পার্ল হারবারে আক্রমণ করে সেখানে অবস্থিত আমেরিকান বিমান বাহিনী প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলল এবং নৌবাহিনীরও ব্যাপক ক্ষতি করল। পরদিন আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। ১১ই ডিসেম্বর জার্মানী আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল । জাপান অল্প সময়ের মধ্যে কিছু চমকপ্রদ জয় অর্জন করল। ডাচ শাসিত ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়া দখল করে নিল। বার্মার অধিকাংশ দখল করে ভারতের প্রান্তে পৌঁছে গেল। প্রশান্ত মহাসাগরে তারা নিউগিনি থেকে উত্তরে মার্শাল দ্বীপ পর্যন্ত অনেক দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তুলল। কিন্তু এই বিজয় ছিল স্বল্প কালের । ১৯৪২ সালের মে ও জুলাই মাসে কোরাল সী ও মিডওয়ের যুদ্ধে আমেরিকানরা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে উড্ডয়ন করা বিমান পাঠিয়ে জাপানী নৌবাহিনীকে পর্যুদস্ত করল। এই সময় থেকে আমেরিকার প্রতিআক্রমণের মুখে জাপানীরা ক্রমেই পিছু হটতে থাকল ।

আটলান্টিক মহাসাগরে বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকেই চলছিল নৌ যুদ্ধ যা Battle of Atlantic নামে পরিচিত। বৃটেন আমেরিকা থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ নৌ জাহাজের বহরে করে যুদ্ধজাহাজের পাহারায় নিয়ে আসত। এগুলো ধ্বংস করার জন্য জার্মানরা যুদ্ধ জাহাজ ছাড়াও ব্যবহার করত সাবমেরিন ও বিমান। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল । তবে জার্মানী বৃটেনের সরবরাহ বন্ধ করতে পারেনি। ১৯৪২ সালের পর থেকে জার্মান সাবমেরিন আরও বেশী সংখ্যায় ধ্বংস করা হতে থাকল, মিত্রশক্তির ক্ষতি কমে আসল। জার্মানীর উপর বিমান আক্রমণ বাড়তে থাকল। উত্তর আফ্রিকায় মিশর থেকে বৃটিশরা প্রতিআক্রমণ করল আর বৃটেন ও ফ্রান্সের সৈন্যদের নৌপথে নামান হল। ইতালীর বাহিনী পরাজিত হল ১৯৪৩ সালে। ইতালী যে সব অঞ্চল অধিকার করেছিল সেগুলো হাতছাড়া হল । এরপর থেকে যুদ্ধের ফলাফল সম্বন্ধে আর সন্দেহ থাকল না । ১৯৪৩ সালে বৃটিশ ও আমেরিকান সৈন্যরা ইতালী আক্রমণ করল। ১৯৪৪ সালের ৬ই জুন মিত্রশক্তির সৈন্যরা উত্তর ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে বিমান ও নৌপথে দেড় লক্ষের বেশী সৈন্য নামিয়ে আক্রমণ করল (এই দিন D-Day নামে পরিচিত)। অবতরণকারী সৈন্যরা ফ্রান্সের জার্মান বাহিনীকে পরাজিত করল। ইতিমধ্যেই মুসোলিনী উৎখাত হয়ে গিয়েছিল এবং জার্মানরা সব দিকে পিছু হটছিল। ১৯৪৪ সালের শেষ দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের এলাকা থেকে জার্মান সৈন্যবাহিনী সম্পূর্ণ বিতাড়িত হয়েছিল এবং সোভিয়েত বাহিনী (লাল ফৌজ নামে পরিচিত) পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে জার্মান বাহিনীকে তাড়িয়ে দিচ্ছিল। এপ্রিল ১৯৪৫ সালে দীর্ঘ ও বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের পর লাল ফৌজ বার্লিন প্রবেশ করল। ততদিনে মিত্রশক্তির পশ্চিম দিকের সৈন্যরা বাল্টিক উপকূলে পৌঁছে গেছে এবং দক্ষিণ জার্মানী ও অষ্ট্ৰীয়া শত্রু মুক্ত করেছে। ৮ই মে হিটলার আত্মহত্যা করল এবং তার সৈন্যবাহিনীর নিঃশর্ত আত্নসমর্পণের মধ্য দিয়ে জার্মান “Third Reich” এর পতন হল ।

এদিকে জাপানও পরাজয়ের কাছাকাছি চলে এসেছিল। তার বিশাল বাহিনী ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধ জাহাজের বেশীরভাগ ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপমালার উপর যে সামরিক ঘাঁটি জাপান স্থাপন করেছিল তাও হারিয়ে ফেলেছিল। মিত্রশক্তির বিমান আক্রমণে জাপানের শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছিল। আগষ্ট মাসে আমেরিকা জাপানের উপর নতুন অস্ত্র প্রয়োগ করল, যার ধ্বংসের শক্তি বহুগুণ বেশী। এগুলো হল আনবিক বোমা। এর একটি ফেলা হল হিরোশিমা ও আর একটা নাগাসাকি শহরে। এই দুই বোমায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হল । ইতিমধ্যেই সোভিয়েত বাহিনী মাঞ্চুরিয়ায় প্রবেশ করে জাপানের সবচাইতে বড় বাহিনী Kwantung Army কে দ্রুত পরাজিত করল। জাপান ১৫ই আগষ্ট ১৯৪৫ আত্নসমর্পণ করল ।

মিত্রশক্তি যতই জার্মান অধিকৃত এলাকা মুক্ত করছিল, ততই নাৎসীদের বর্বরতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল। অনেক জায়গায় নাৎসী বন্দী শিবির ছিল এবং সেগুলোতে বন্দীদের উপর নিষ্ঠুর অত্যাচারের চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছিল। এগুলোতে অকল্পণীয় নির্যাতন, বন্দীশ্রম ও গণহত্যা ঘটেছিল। এই সব বন্দীরা ছিল কোন কোন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা যুদ্ধবন্দী, কোন

ক্ষেত্রে শুধুই অধিকৃত এলাকা থেকে বন্দী শ্রমের জন্য ধরে নিয়ে আসা মানুষ। একটা বড় অংশ ছিল ইহুদীরা। শুধু মাত্র ধর্মের কারণে তাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করছিল । জার্মানী এবং সমস্ত অধিকৃত এলাকা থেকে ধরে নিয়ে এসে তাদের হত্যা করা হচ্ছিল । সঠিক সংখ্যা হয়তো কোন দিনই জানা যাবে না- তবে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ ইহুদীকে গ্যাস চেম্বার বা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প এ হত্যা করা হয়।

যুদ্ধের প্রকৃতি

উদার ও বামপন্থীরা পশ্চিমা দেশগুলোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই বলে প্রচার করেন। যুদ্ধরত দেশগুলির শাসক গোষ্ঠীর যুদ্ধে যাওয়ার কারণ ছিল ভিন্ন। উইনষ্টন চার্চিল ওমদূরমান এ হত্যা কান্ডের সময় উপস্থিত ছিলেন (সুদানের ওমদূরমান এ বৃটিশ বাহিনী ১৮৯৮ সালে মাহদীপন্থীদের নির্বিচারে হত্যা করে)। চার্চিল ১৯১০ সালে ধর্মঘটী শ্রমিকদের হত্যা করার জন্য সৈন্যবাহিনী পাঠান ও কুর্দী বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য বৃটিশ বিমান বাহিনীকে গ্যাস প্রয়োগ করার নির্দেশ দেন। বৃটিশ সরকার ত্রিশের দশকে যখন অত্যন্ত সীমিত আকারে ভারতীয়দের শাসন কার্যে অন্তর্ভূক্ত করে তখন তিনি জোর প্রতিবাদ জানান। কাজেই গণতন্ত্রের জন্য চার্চিল যুদ্ধ করেছিলেন তা বলা যায় না। বৃটিশ বাহিনী যখন ইউরোপের মূল ভূখন্ড থেকে যুদ্ধের শুরুতে বিতাড়িত হল, তখন তারা তাদের সমর উপকরণ ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছিল । এই পরিস্থিতিতে বৃটেনের শাসকগোষ্ঠীর অর্ধেকই জার্মানীর সঙ্গেই আপোষ করার পক্ষপাতি ছিল এমন সব শর্তে যা চার্চিল অপমানজনক মনে করেছিলেন।৺ চার্চিল ও তার সহযোগীরা রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বৃটিশ শ্রমিক দলের সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন। সাম্রাজ্যবাদী বক্তব্য বর্জন না করলে কোয়ালিশন ধরে রাখা মুস্কিল হত। তাই গণতন্ত্র, আত্ননিয়ন্ত্রণাধিকার এর কথা বলতে হল । এছাড়া রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর খাদ্য নিশ্চিত করা হল, যুদ্ধশেষে উন্নত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল । তৎকালীন রক্ষণশীল নেতা কুইনটিন হগ (পরবর্তীতে লর্ড হালিশাম) বলেছিলেন, সরকার যদি সংস্কার না করে, তাহলে বিপ্লব ঘটতে পারে।

যুদ্ধের গতিধারা লক্ষ্য করলে বৃটিশ ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য বোঝা যায়। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত (বৃটিশ সৈন্য ইতালীতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত), যখন ইউরোপে প্রবল যুদ্ধ হচ্ছিল ও যুদ্ধের পরিণতি নির্ধারিত হচ্ছিল, তখন বৃটেন ইউরোপে যুদ্ধ না করে উত্তর আফ্রিকায় যুদ্ধ করছিল। কারণ বৃটেন সুয়েজ খাল ও মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাচ্ছিল । ইতালী আক্রমণও ছিল ভূমধ্যসাগরে আবার কর্তৃত্ব স্থাপন করা। তখনও ভারতকে স্বাধীনতা দিতে বৃটেন রাজী ছিল না। ১৯৪২ সালে হাজার হাজার বৃটিশ সৈনিক নাৎসীদের সঙ্গে যুদ্ধ না করে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করতে ব্যস্ত ছিল।

আমেরিকার সরকারও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ও ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে সরব ছিল। কিন্তু তড়িঘড়ি করে আনবিক বোমা ফেলে জাপানকে দ্রুত পরাভূত করা হল, যদিও যথেষ্ট প্রমাণ ছিল যে, জাপান শর্ত ছাড়াই আত্নসমর্পণ করার জন্য তৈরী হচ্ছিল। সোভিয়েত বাহিনী দ্রুতগতিতে মাঞ্চুরিয়াতে জাপানের Kwantung Army কে পরাজিত করে এগিয়ে আসছিল । তারা কাছে পৌঁছালে যুদ্ধ পরবর্তী জাপানের ব্যাপারে তাদের ভূমিকা থাকত-তা বন্ধ করা হল ।

তথ্য সূত্র:

১. Harman C. A People’s History of The World. London, 2008, p 521

২. Roberts JM. A Short History of the World. New York, 1993, p 454

  1. Roberts JM. p 455-456
  2. Harman C. p 522

৫. http://en.wikipedia.org/wiki/World War 11,accessed 25 April 2013 ৬. Harman C. p 526

 

You may also like...