ইহুদিদের ঘৃণা করে মুসলমানরা কি পেল? [ পর্ব-৩ ]

ইতোপূর্বে বর্ণিত ২-পর্বের তথ্যচিত্রে মুসলমান দেশগুলো ভার্সাস ইহুদি-খৃস্টান দেশের তথ্যচিত্র তুলে ধরা হলো, যাতে মুসলমানগণ তাদের অবস্থান বুঝতে পারবেন। ৫৭টি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা ৫০০টি, অন্যদিকে শুধু আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা ৫৭৫৭টি, যেখানে ভারতের মত দেশেও বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ৮৪০৭টি। শিক্ষার হার ইহুদি-খৃস্টান সমাজে ৯৯%, মুসলমানদের মধ্যে ৪০%, ১৫টি খৃস্টান দেশে শিক্ষার হার ১০০%, অনেক মুসলমানে দেশে শিক্ষার হার খুবই হতাশাজনক মানে ৫-১০%। বর্তমানে যেখানে বিশ্বের সর্বত্র ১০০% খৃস্টান শিশু স্কুলে যায়, সেখানে গড়ে ৫০% মুসলমান শিশু স্কুলে যায়। যেখানে ৪০% খৃস্টান শিক্ষার্থী ভার্সিটিতে পড়ে, সেখানে ৩% মুসলমান শেষ পর্যন্ত ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পায়। মুসলমান জনসংখ্যার মধ্যে গড়ে ১ মিলিয়নে বিজ্ঞানী সংখ্যা ২৩০ জন, কেবল আমেরিকায় ১ মিলিয়নে বিজ্ঞানী সংখ্যা ৫০০০ জন। গবেষণা ও উন্নয়নে মুসলমান দেশগুলো তাদের জিডিপির ০.২% ব্যয় করলেও, খৃস্টান দেশগুলো গড়ে ৫% জিডিপি ব্যয় করে। উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানীর দিক দিয়ে পাকিস্তান তার উৎপাদনের ১%, সৌদি আরব, কুয়েত, মরক্কো, আলজেরিয়া ০.৩% রপ্তানী করলেও, কেবল সিঙ্গাপুর তার উৎপাদিত পণ্যের ৫৮% রপ্তানী করে। আবিস্কার ও অন্যবিধ উন্নয়ন কার্যক্রমে বিশ্বের ১০৫ বছরের ইতিহাসে ১৮০ জন ইহুদি নোবেল পুরস্কার পেলেও, ৫৭টি দেশের ১৫০ কোটি মুসলমানের মধ্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সংখ্যা সাকুল্যে ৮, যার মধ্যে শান্তিতে ৫ ও আবিস্কারের জন্যে মাত্র ৩ জন। এ তথ্যচিত্রই আমাদের বলে দেয়, মুসলমান হিসেবে আমাদের অবস্থান বর্তমান বিশ্বে কোথায়!

:

অথচ আমরা আমাদের উন্নয়নের কোন চেষ্টা না করে নিজেরা নিজেদের ধ্বংসের নানাবিধ ফাঁদ তৈরী করছি। বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ তৈরী করে নিজেরা নিজেদের উপর বোমা, গ্রেনেড মারছি। বাংলাদেশে আদালতে আল্লাহর আইন প্রবর্তনের নামে বিচারকদের বোমা মেরে হত্যা করছি, আবার পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নী-মোহাজির নামে মসজিদে আক্রমণ করে প্রায় প্রত্যহ নানাভাবে মানুষ হত্যা করছি। আধুনিক বিশ্বের মানুষ ও মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত কেবল ইহুদিদের নিন্দা না করে, তাদের সঙ্গে বৈরিতার পরিবর্তে তারা কিভাবে তাদের জাতিকে সংগঠিত করছে, বিশ্বের একটি মাত্র ইহুদি রাষ্ট্র হওয়ার পরও তাদের মধ্যে জাতিগত ঐক্য কিভাবে সংহত হচ্ছে, তাদের জাতির মধ্যে বিশ্বনিয়ন্ত্রক বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ কিভাবে তৈরী হচ্ছে তার খোঁজ ও তাদের বিষয়ে গবেষণা করা। আরো গবেষণা করা দরকার, আজকের মুসলমানদের বর্তমান দূরবস্থার কারণ অনুসন্ধানের। ইহুদিদের জ্ঞানবিজ্ঞানে নিত্য নৈমিত্তিক উন্নতির ‘গোপন রহস্য’ এবং এর বিপরীতে মুসলমানদের প্রাত্যহিক হানাহানির ‘সঠিক কারণ’ নির্ধারণে গবেষণালব্দ ফল পেলে হয়তো মুসলমান জাতি ঘুরে দাঁড়াতেও পারে। অন্যথায় চলমান সময়ে শুধু ইহুদিদের বদনাম ও গালি দিয়ে মুসলমানরা কোন উন্নতি করতে পারেনি কিংবা পারবে এমন কোন সম্ভাবনা আছে কি একুশ শতকের পৃথিবীতে?

:

আসলে মানুষ হিসেবে প্রত্যেক জ্ঞানী-গুণীকে শ্রদ্ধা জানাতে যেদিন পারবো আমরা, হোক সে মুসলমান কিংবা ইহুদি অথবা অন্য কোন ধর্মের অনুসারী কিংবা ধর্মের ব্যাপারে অনাগ্রহী কেউ। একই ভাবে মানুষ হয়েও পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে যারা, অকল্যাণে নিয়োজিত ধর্ম আর জাতির নামে, হোক সে মুসলমান কিংবা নন-মুসলমান, তাকে যেদিন সম্মিলত ঘৃণা করতে শিখবে সবাই, সেদিন অবশ্যই লাভ আমাদের হবে। মুসলমানদের মধ্যে এ চেতনা যতদিন জাগ্রত না হয়, ততদিন তারা যতই ইহুদিদের ঘৃণা করুক, ইজরায়েলকে যতই ধ্বংস করতে চাক, নিজেদের উন্নতি তাদের ঘটবে না। এ সত্যটি যত তড়িৎ আমাদের মগজে ঢুকবে ততই আমাদের মঙ্গল। অন্যথায় “ইন্তে ইহাহুদ” “ইন্তে ইহাহুদ” বলতে বলতে আমরা নিজেরা নিজেদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই করতে পারবো না!

:

নোট

এ লেখাটি লিখতে ইহুদি ও মুসলমান বিষয়ক অংশের জন্য “রেফারেন্স” ব্যবহার করি সহীহ আল বুখারী, সহীহ আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সহীহ মুসলিম, সহীহ তিরমিযী, মুয়াত্তা ইমাম মালিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ইসলামিক বিশ্বকোষ (১-২৬ খন্ড, কেবল ২৬তম খন্ডের পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮৩৭, সবখন্ডে মোট নিবন্ধ সংখ্যা-১৩,১৯২, বইর ফর্মা সংখ্যা ২,৬০২, ২৬-খন্ডের মোট মূল্য ১৫,৭৫০/- টাকা) নাহ্জ আল বালাঘা, ইবনে ইশাকের “সিরাত রাসুল আল্লাহ”, ইবনে হিশামের “সিরাত”, আল তাবারীর “তারিখ আল রাসুল ওয়াল মুলক”, আল ওয়াকিদির “কিতাব আল মাগাজি”, মুহাম্মাদ ইবনে সা’দের “কিতাব আল তাবাকাত আল কবির”, Raficq S Abdulla & Mohammed M Keshavjee রচিত “Understanding Sharia Islamic Law in a Globalised World” পুস্তক। তাছাড়া ইহুদি ও খৃস্ট ধর্ম অংশের জন্যে “তারিখুল ইয়াহুদ দি বিলাদিল আরব”, এন্টি-সেমিটিজম (Anti-Semitism) বিষয়ক নানাবিধ প্রবন্ধ। তোরাহ বা ওল্ড টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্ট, জবুর, মিশনা, গেমারা, তালমুদ কিতাব। তাতে জেনেসিস, যিশাইয়, বংশাবলী, গণনা পুস্তক, বিচারকগণ, ২য় বিবরণ, শমুয়েল, ডয়টারনোমি (Deuteronomy) আদিপুস্তক প্রভৃতি পড়ার সুযোগ হয়েছে “কিতাবুল মুকাদ্দেস” মূল পুস্তক এবং গুগল, উইকি ও বিভিন্ন মাধ্যমে।

You may also like...