এন্টিগোনি

বইয়ের নাম: এন্টিগোনি
ধরণ: গ্রীক ট্র্যাজেডি
লেখক: সফোক্লিস
অনুবাদ: মোবাশ্বের আলী
প্রকাশনী: বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র
পৃষ্ঠা সংখ্যা – ৬৪
.
সফোক্লিসের রাজা ইডিপাসের পরবর্তী কাহিনী হলেও এন্টিগোনি রচিত হয়েছিল আগে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অনুবাদের শুরুতে রাজা ইডিপাস ও কলোনাসে ইডিপাস ট্র্যাজেডি দুটো নিয়ে হালকা আলোচনা করা হয়েছে, এতে যারা রাজা ইডিপাস আগে পড়েছেন তাদের স্মৃতিরোমন্থন হবে আর যারা পড়েননি তারা ধারণা পাবেন। অলঙ্ঘনীয় নিয়তির নিষ্ঠুরতায় নিজের অনিচ্ছায়-অজান্তে পিতৃহত্যা ও মায়ের গর্ভে চার সন্তান জন্ম দেয়ার শাস্তিস্বরূপ অন্ধ ইডিপাসের কলোনাসে নির্বাসিত হওয়ার পরে তার দুই পুত্র পলিনিসেস ও ইটিওক্লিস রাজত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বে একে অপরকে হত্যার পর থেকেই এন্টিগোনির কাহিনী শুরু।
.
এন্টিগোনি হচ্ছে রাজা ইডিপাসের কন্যা এবং পলিনিসেস ও ইটিওক্লিসের বোন। তাদের আরেক বোন ইজমিনির সাথে কথপোকথন দিয়েই নাটকের শুরু। ইটিওক্লিস থিবিসের রাজা হওয়ায় এবং তার ভাই পলিনিসেস রাজ্য দখলের জন্য আক্রমণ করায় মৃত্যুর পরে ইটিওক্লিসকে পরিপূর্ণ মর্যাদায় কবর দেয়া হলেও তাদের মামা ও বর্তমান রাজা ক্রিয়ন পলিনিসেসকে দেশদ্রোহী হিসেবে তার লাশ কবর না দিয়ে শেয়াল-শকুনের জন্য ফেলে রাখার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু বোন হিসেবে ভাই পলিনিসেসকে কবরের সম্মান দিতে চায় এন্টিগোনি আর রাজাজ্ঞা অমান্য করে এটা করার পরিণতি সম্পর্কে তাকে সতর্ক করে ইজমিনি। তা সত্ত্বেও এন্টিগোনি তার ভাইকে মাটি দিতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় আর রাজা ক্রিয়ন তাকে অন্ধ গুহায় বন্দী করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর শাস্তি দেয়। অপরদিকে এন্টিগোনি ক্রিয়নেরই পুত্র হ্যামনের বাগদত্তা, হ্যামন এন্টিগোনির প্রতি এই নিষ্ঠুরতা উচিত নয় সেটা বাবাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে প্রাসাদ ত্যাগ করে। ভবিষ্যদ্বক্তা টিরেসিয়াস ক্রিয়নের পুত্রকেও হারাতে হবে ভবিষ্যদ্বাণী করলে পরিচালকের পরামর্শে ক্রিয়ন নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং পলিনিসেসকে যথাযোগ্য সম্মানে কবর দেয়, কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে, এন্টিগোনি মারা গেছে, হ্যামন আত্মহত্যা করেছে আর পুত্রশোকে ক্রিয়নের স্ত্রী য়ুরিডিকিও আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন! সবশেষে ক্রিয়নের জীবনে রইলো শুধুই ট্র্যাজেডি।
.
এন্টিগোনি তার ভাইকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে কবর দেয়ার ব্যাপারে যেমন অনড় ছিল, ঠিক তেমনি একজন দেশদ্রোহীকে সম্মান না দেয়াকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব মনে করে সেটা নিশ্চিত করতে অনড় ছিলেন রাজা ক্রিয়ন। এ দ্বন্দ্বে কার জয় হয়েছে তার চেয়ে বড় হচ্ছে গ্রীক ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী অলঙ্ঘনীয় বেদনাদায়ক নিয়তিরই জয় হয়েছে।
.
নাটকটির বেশ কিছু সংলাপ/সংলাপের বাক্য ভালো লেগেছে:
√ জীবিতকে তুষ্ট করার জন্য আমাদের সময় নেহাত অল্প কিন্তু মৃতকে ভালোবাসার জন্যই তো অনন্তকাল। – এন্টিগোনি
√ শয়তানির মধ্যে লাভের চাইতে লোকসানই বেশি। – ক্রিয়ন
√ পৃথিবীতে বিস্ময় অনেক, কিন্তু সবচাইতে বিস্ময়কর হলো মানুষ! – কোরাস
√ ঘৃণা নয়, ভালোবাসাই আমার কাম্য। – এন্টিগোনি।
√ জ্ঞানী লোক ভুল করলেও তা সংশোধন করে নেয়; আর এই-ই তো সঙ্গত। – হ্যামন
√ অভ্রান্ত জ্ঞান থাকা অবশ্যই উত্তম কিন্তু তা কদাচিৎ লক্ষণীয়। তাই পরবর্তী ভালো হচ্ছে উপদেশ শোনার মতো আগ্রহ। – হ্যামন
√ (পিতার) গোঁয়ার্তুমির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা কি শাসানো? – হ্যামন।
√ এক স্বামী হারালে অন্য স্বামী পাওয়া যায়, আবার তার থেকে সন্তান-সন্ততি! কিন্তু ভাই হারালে অন্য একটি ভাই কোথায় পাব! – এন্টিগোনি
√ একমাত্র নির্বোধই শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছায় চালিত হয়। – টিরেসিয়াস
√ মৃতকে ন্যায্য প্রাপ্য দাও। পতিতকে আঘাত করো না। বারবার হত্যার মধ্যে কোনো মাহাত্ম্য নেই। – টিরেসিয়াস
√ যে মরণশীল মানুষ ইষ্টের ছলে অনিষ্ট করে, স্বীয় স্বার্থলোভে আকাঙ্ক্ষী হয়, তার পতন বিরাট ও ভয়াবহ। – টিরেসিয়াস
√ ভ্রান্ত হৃদয়ের পাপ মানুষকে মৃত্যুর পথে পরিচালিত করে। – ক্রিয়ন
√ বেদনার মধ্য দিয়ে সত্যপোলব্ধি হ’ল (হয়)।… মরণশীল মানুষের এমনই যাতনা। -ক্রিয়ন
√ প্রতিকূল পরিবেশে দ্রুত কাজই সঙ্গত। – কোরাস
√ নিয়তি নির্ধারিত বেদনা থেকে মানুষের নিষ্কৃতি নেই। – কোরাস
√ জ্ঞানই সুখের চরম অবস্থা।…
গর্বিতের দম্ভোক্তি নিদারুণ আঘাতে শাস্তি লাভ করে এবং বার্ধক্যেই মানুষ এসব শিক্ষালাভে প্রকৃত সমর্থ। – কোরাসের পরিচালক

শামস অর্ক

You may also like...